চট্টগ্রাম ভয়ংকর সড়কে প্রাণ হাতে নিয়ে যাত্রা
চট্টগ্রাম: এক সপ্তাহে তিন শিক্ষার্থীসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় নগরে চলাচলরত যানবাহন চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ৯টার দিকে ধনিয়ালাপাড়ায় ফ্লাইওভারের মুখে সিএনজি অটোরিকশা ও হিউম্যান হলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কাজী মাহমুদুর রহমান (১৪)। একইদিন রাতে বাঁশখালীর চাম্বল বাজারে ট্রাক চাপায় নিহত হন মোটর সাইকেল আরোহী আনোয়ার হোসেন (৪০)।
সোমবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেছে কলেজ শিক্ষার্থী রেশমা আকতার (১৮) এর। বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কোতোয়ালীর মোড়ে সরকারি সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সোমা বড়ুয়ার (১৮) মর্মান্তিক মৃত্যু হয় কাভার্ড ভ্যান চাপায়। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক এলাকায় মাইক্রোবাস চাপায় নিহত হন প্রদীপ কুমার দত্ত (৫২) নামে পিডিবির এক কর্মচারী।
![সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনা। ফাইল ফটো](https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2018October25/bg/Accident-Bg220190123142834.jpg)
রাস্তায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন (যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক) চলাচল এবং অবৈধ পার্কিং-এর ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে আহত ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালেও নেয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় নিহত মাহমুদুর রহমানকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় দেওয়ানহাট মোড়ে প্রায় ২০ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয় বলে জানান উদ্ধারকারীরা।
সিএমপির ট্রাফিক সার্জেন্ট শান্তময় দাশ বাংলানিউজকে বলেন, চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা বেশি। এছাড়া হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং এবং পথচারীদের অসতর্কতায়ও দুর্ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে সড়কের বেহাল দশা বিরাজ করছে। খোঁড়াখুঁড়ির পর যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, ফুটপাত ঘেঁষে বসানো লোহার অ্যাঙ্গেলে লেগেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের নগর সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজীব বাংলানিউজকে বলেন, বাসচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতবছর ঢাকার পর চট্টগ্রামেও সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এরপরও অবস্থা পাল্টায়নি। যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি থামিয়ে দিচ্ছে মানুষের জীবনের গতি। সড়কে এখন প্রাণ হাতে নিয়েই যাত্রা করতে হয় মানুষকে। নিসচা নগরে দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত গাড়ির গতিরোধে ট্রাফিক বিভাগের ভূমিকাই মুখ্য।
![লোহাগাড়ায় দুর্ঘটনাকবলিত যান। ফাইল ফটো](https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2018October25/bg/Acci-bg20190123144845.jpg)
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, নগরের নির্দিষ্ট আটটি রুটে দিনে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে অভিযান চলছে। এতে সড়কগুলোতে যানজট কমবে, পাশাপাশি দুর্ঘটনাও কমে আসবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর বাংলানিউজকে বলেন, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। সড়ক দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে অদক্ষ চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে। এসব বিষয় দেখভাল করা ও চালকদের সচেতন করার দায়িত্ব বিআরটিএ’র। সংস্থাটির নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট আছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরাও তাদের অভিযানে সহযোগিতা করে আসছে।
No comments: